আলবার্ট
আইনস্টাইন | Albert Einstein
জন্ম ১৪ মার্চ
১৮৭৯ : উল্ম, উরটেমবার্গ (Württemberg), জার্মানি
মৃত্যু ১৮ এপ্রিল
১৯৫৫ (বয়স ৭৬): প্রিন্সটন,
নিউ জার্সি, যুক্তরাষ্ট্র
পুরস্কার:
বার্নার্ড মেডেল
(1920)
পদার্থবিজ্ঞানে
নোবেল পুরষ্কার (1921)
ম্যাটুউসি মেডেল
(1921)
ফরমেমআরএস (1921)
কোপালি পদক (1925)
রয়েল
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির স্বর্ণপদক (1926)
ম্যাক্স
প্লাংক পদক (1929)
জাতীয় বিজ্ঞান
একাডেমির সদস্য (1942)
শতাব্দীর সময়
পার্সন (1999)
আলবার্ট
আইনস্টাইন (জার্মান: Albert Einstein ) (১৪ মার্চ ১৮৭৯ - ১৮ এপ্রিল ১৯৫৫) জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী একজন নোবেল
পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত
ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯২১ সালে
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার পুরস্কার লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ
করা হয়, তাত্ত্বিক
পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কীত গবেষণার
জন্য।
আইনস্টাইন
পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা করেছেন এবং নতুন উদ্ভাবন ও
আবিষ্কারে তার অবদান অনেক। সবচেয়ে বিখ্যাত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব বলবিজ্ঞান ও
তড়িচ্চৌম্বকত্বকে একীভূত করেছিল এবং আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অসম গতির ক্ষেত্রে
আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নতুন মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত
করেছিল। তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে আপেক্ষিকতাভিত্তিক বিশ্বতত্ত্ব,
কৈশিক ক্রিয়া, ক্রান্তিক উপলবৎ বর্ণময়তা, পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানের চিরায়ত সমস্যাসমূহ ও
কোয়ান্টাম তত্ত্বে তাদের প্রয়োগ, অণুর ব্রাউনীয়
গতির একটি ব্যাখ্যা, আণবিক
ক্রান্তিকের সম্ভ্যাব্যতা, এক-আণবিক গ্যাসের
কোয়ান্টাম তত্ত্ব, নিম্ন বিকরণ
ঘনত্বে আলোর তাপীয় ধর্ম (যা ফোটন তত্ত্বের ভিত্তি রচনা করেছিল), বিকিরণের একটি তত্ত্ব যার মধ্যে উদ্দীপিত
নিঃসরণের বিষয়টিও ছিল, একটি একীভূত
ক্ষেত্র তত্ত্বের প্রথম ধারণা এবং পদার্থবিজ্ঞানের জ্যামিতিকীকরণ।
১৯৩৩ সালে এডলফ
হিটলার জার্মানিতে ক্ষমতায় আসেন, সে সময় তিনি
বার্লিন একাডেমি অব সায়েন্সের অধ্যাপক ছিলেন। ইহুদী হওয়ার কারণে আইনস্টাইন সে
সময় দেশত্যাগ করে আমেরিকায় চলে আসেন এবং আর জার্মানিতে ফিরে যান নি। আমেরিকাতেই
তিনি থিতু হোন এবং ১৯৪০ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর
আগে আগে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টকে একটি চিঠি লেখেন।
চিঠিতে তিনি জার্মানি "ভিন্ন ধরনের অসম্ভব শক্তিশালী বোমা বানাতে পারে"
মর্মে সতর্কতা উচ্চারণ করে আমেরিকাকেও একই ধরনের গবেষণা শুরুর তাগিদ দেন। তার এই
চিঠির মাধ্যমেই ম্যানহাটন প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়। আইনস্টাইন মিত্রবাহিনীকে
সমর্থন করলেও পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিলেন। পরে ব্রিটিশ দার্শনিক
বার্টান্ড রাসেলের সঙ্গে মিলে আণবিক বোমার বিপদের কথা তুলে ধরে রাসেল-আইনস্টাইন
ইশতেহার রচনা করেন। ১৯৫৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইনস্টিটিউট অব এডভান্সড স্টাডির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বৈজ্ঞানিক
গবেষণাপত্র:
আইনস্টাইনের
গবেষণাকর্মসমূহ বিস্তৃত রয়েছে ৫০টিরও
অধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র এবং কিছু বিজ্ঞান-বহির্ভূত পুস্তকে।১৯৯৯ সালে টাইম
সাময়িকী আইনস্টাইনকে "শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি" হিসেবে ঘোষণা করে। এছাড়া
বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি ভোট গ্রহণের মাধ্যমে জানা গেছে, তাকে প্রায় সবাই সর্বকালের সেরা
পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সাধারণ সংস্কৃতি এবং দৈনন্দিন ব্যবহারে
মেধাবী এবং প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন কাউকে বা কোনো কিছুকে বুঝাতে এখন তাই
"আইনস্টাইন" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এটি মেধার সমার্থক।
১৯০৫ সালে
পেটেন্ট অফিসে কর্মরত থাকাকলিন সময়ে আইনস্টাইন Annalen der Physik নামক জার্মান বিজ্ঞান সাময়িকীতে চারটি
গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তখনও তিনি পেটেন্ট অফিসে কর্মরত ছিলেন। জার্মানির
নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রগুলোকে ইতিহাসে অ্যানাস
মিরাবিলিস গবেষণাপত্রসমূহ নামে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে। গবেষণাপত্র চারটির বিষয়
ছিল:
আলোক তড়িৎ
ক্রিয়া - আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ সমীকরণ প্রতিপাদন।
ব্রাউনীয় গতি -
আণবিক তত্ত্বের সমর্থন।
তড়িৎগতিবিজ্ঞান
- আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব আবিষ্কার।
ভর-শক্তি
সমতুল্যতা - বিখ্যাত E=mc2 সূত্র
প্রতিপাদন।
চারটি গবেষণাপত্র
বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিস্ময়কর ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত এবং এগুলোর কারণেই ১৯০৫ সালকে
আইনস্টাইনের জীবনের "চমৎকার বছর" হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অবশ্য সে সময়
তার গবেষণাপত্রের অনেকগুলো তত্ত্বই প্রমাণিত হয়নি এবং অনেক বিজ্ঞানীর কয়েকটি
আবষ্কারকে ভ্রান্ত বলে উড়িয়ে দেন। যেমন আলোর কোয়ান্টা বিষয়ে তার মতবাদ অনেক
বছর ধরে বিতর্কিত ছিল।২৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি
ডিগ্রি অর্জন করেন। তার উপদেষ্টা ছিলেন পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক
আলফ্রেড ক্লাইনার। তার পিএইডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল, "আ নিউ ডিটারমিনেশন অফ মলিক্যুলার ডাইমেনশন্স"
তথা আণবিক মাত্রা বিষয়ে একটি নতুন নিরুপণ।(Einstein 1905)
পদোন্নতি ও
অধ্যাপনা শুরু:
১৯০৬ সালে
পেটেন্ট অফিস আইনস্টাইনকে টেকনিক্যাল পরীক্ষকের পদে উন্নীত করে। কিন্তু তিনি তখনও
পড়াশোনার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯০৮ সালে বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের privatdozent
হিসেবে যোগ দেন।১৯১০ সালে
তিনি ক্রান্তীয় অনচ্ছতা বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন। এতে পরিবেশে একক অণু
কর্তৃক বিচ্ছুরিত আলোর ক্রমপুঞ্জিত প্রভাব বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এর মাধ্যমেই
আকাশ কেন নীল দেখায় তার রহস্য উন্মোচিত হয়। ১৯০৯ সালে আরও দুটি গবেষণাপত্র
প্রকাশ করেন। প্রথমটিতে তিনি বলেন, ম্যাক্স প্লাংকের
শক্তি-কোয়ান্টার অবশ্যই সুনির্দিষ্ট ভরবেগ থাকতে হবে এবং তা একটি স্বাধীন
বিন্দুবৎ কণার মত আচরণ করবে। এই গবেষণাপত্রেই ফোটন ধারণাটির জন্ম হয়। অবশ্য ফোটন
শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন গিলবার্ট এন লুইস ১৯২৬ সালে। তবে আইনস্টাইনের
গবেষণায়ই ফোটনের প্রকৃত অর্থ বোঝা যায় এবং এর ফলে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে
তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা বিষয়ক ধারণার উৎপত্তি ঘটে। তার অন্য গবেষণাপত্রের নাম ছিল
"Über die Entwicklung unserer Anschauungen über das Wesen und die
Konstitution der Strahlung" (বিকিরণের গাঠনিক
রূপ এবং আবশ্যকীয়তা সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন) যা আলোর কোয়ান্টায়ন
বিষয়ে রচিত হয়।
১৯১১ সালে জুরিখ
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন আইনস্টাইন। অবশ্য এর পরপরই চার্লস
ইউনিভার্সিটি অফ প্রাগে পূর্ণ অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। প্রাগে অবস্থানকালে আলোর
উপর মহাকর্ষের প্রভাব বিশেষত মহাকর্ষীয় লাল সরণ এবং আলোর মহাকর্ষীয় ডিফ্লেকশন
বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন। এর মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যগ্রহনের (Solar
eclipse) সময় আলোর ডিফ্লেকশনের
কারণ খুঁজে পান। এ সময় জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী Erwin Freundlich বিজ্ঞানীদের প্রতি আইনস্টাইনের চ্যালেঞ্জগুলো
প্রচার করতে শুরু করেন।
তথ্যসূত্র :
(উইকিপিডিয়া,
মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে)
Unselectable text.