(১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯ – ১৯ এপ্রিল ১৮৮২)
ঊনিশ শতকের একজন ইংরেজ জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন । তিনিই প্রথম প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিবর্তনবাদের ধারণা দেন। তিনিই সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন যে সকল প্রকার প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে উদ্ভূত হয়েছে এবং তার এ পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন।বিবর্তনের এই নানান শাখা-প্রশাখায় ভাগ হবার বিন্যাসকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করেন। তার জীবদ্দশাতেই বিবর্তনবাদ একটি তত্ত্ব হিসাবে বিজ্ঞানী সমাজ ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কাছে স্বীকৃতি লাভ করে, তবে ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ এর মধ্যে বিকশিত আধুনিক বিবর্তনিক সংশ্লেষের মাধ্যমে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক নির্বাচনের গুরুত্ব পূর্ণরূপে অনুধাবন করা সম্ভব হয়। পরিবর্তিত রূপে ডারউইনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল জীববিজ্ঞানের একত্রীকরণ তত্ত্ব, যা জীববৈচিত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করে।
প্রকৃতির প্রতি ডারউইনের গভীর আগ্রহের কারণে তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়নে মনোযোগী ছিলেন না; বরং তিনি সামদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। অতঃপর ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন তার মধ্যকার প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের আগ্রহকে অনুপ্রাণিত করে।এইচ এম এস বিগলে তার পাঁচ বছরব্যাপী যাত্রা তাকে একজন ভূতাত্ত্বিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং বিগলের ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হলে তা তাকে জনপ্রিয় লেখকের খ্যাতি এনে দেয়।
ভ্রমণকালে তার সংগৃহীত বন্যপ্রাণ ও ফসিলের ভৌগোলিক বণ্টন দেখে কৌতূহলী হয়ে ডারউইন প্রজাতির ট্রান্সমিউটেশান নিয়ে অনুসন্ধান করেন এবং ১৮৩৮ সালে তার প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদটি দানা বেঁধে উঠতে শুরু করে।যদিও তিনি তার এ ধারণাটি নিয়ে কিছু প্রকৃতিবিদের সাথে আলোচনা করেছিলেন, তার বিস্তারিত গবেষণা কাজের জন্যে আরও সময়ের প্রয়োজন ছিল এবং তাকে তার প্রধান ক্ষেত্র ভূতত্ত্ব নিয়েও কাজ করতে হচ্ছিল।তিনি তার তত্ত্বটি লিখছিলেন যখন ১৮৫৮ সালে আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস তাকে একই ধরনের চিন্তাভাবনা সম্বলিত একটি প্রবন্ধ পাঠান, যার ফলে অনতিবিলম্বে তাদের উভয়ের তত্ত্ব যৌথভাবে প্রকাশিত হয়। ডারউইনের তত্ত্ব কিছু পরিবর্তিত হয়ে প্রকৃতিতে বহুল বৈচিত্রের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে।১৮৭১ সালে তিনি মানব বিবর্তন এবং যৌন নির্বাচন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এবং মানুষের ক্রমনোন্নয়ন, ও তারপর পরই মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীতে অনুভূতির প্রকাশ নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। বৃক্ষ নিয়ে তার গবেষণা কয়েকটি গ্রন্থে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং তার শেষ বইতে তিনি কেঁচো এবং মাটির উপর এদের প্রভাব নিয়ে তার গবেষণা প্রকাশ করেন।
ডারউইনের বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতির কারণে তিনি ছিলেন ১৯ শতকের মাত্র পাঁচজন রাজপরিবারবহির্ভূত ব্যক্তিদের একজন যারা রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সম্মান লাভ করেন। ডারউইনকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে সমাহিত করা হয়, বিজ্ঞানী জন হার্শেল ও আইজ্যাক নিউটনের সমাধির পাশে।
এইচএমএস বিগ্লের দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা পরিচালিত হয় ইংরেজ ক্যাপ্টেন রবার্ট ফিট্জ্রয় এর নেতৃত্বে। ১৮৩১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ডেভেনপোর্ট থেকে যাত্রা শুরু করে ১৮৩৬ সালের ২রা অক্টোবর ফালমাউথ বন্দরে ফিরে আসে এইচএমএস বিগ্ল। এটিই দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা। প্রথম সমুদ্রযাত্রারও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফিট্জ্রয়। দ্বিতীয় যাত্রায় নিসর্গী তথা প্রকৃতিবিদ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন তরুণ চার্লস ডারউইন। এই যাত্রায়ই তিনি বিবর্তনবাদের ভিত রচনা করেন। যাত্রার বর্ণনা এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে ডারউইন একটি বই লিখেন যার নাম দ্য ভয়েজ অফ দ্য বিগ্ল।
২৭ ডিসেম্বর ১৮৩১ -এ শুরু হয়ে এ সমুদ্রসযাত্রা প্রায় পাঁচ বছর চলে এবং ডারউইন ফিটজরয়ের আকাঙ্ক্ষানুযায়ী এর প্রায় পুরোটা সময় ডাঙ্গায় ভূতাত্ত্বিক ও প্রাকৃতিক ইতিহাস সংগ্রহ করে কাটান, যখন বিগল তটভূমি জরিপ করছিল।তিনি তার পর্যবেক্ষণ ও তাত্ত্বিক ধারণাগুলো যত্ন করে লিখে রাখতেন এবং নিয়মিত বিরতিতে তার সংগৃহীত নমুনা চিঠিসহ ক্যাম্ব্রিজে পাঠাতেন, যেখানে তার পরিবারকে তার লেখা দিনলিপির অনুলিপিও অন্তর্ভুক্ত হত।তার ভূতত্ত্ব, গুবরে পোকা সংগ্রহ এবং সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী ব্যবচ্ছেদ করায় দক্ষতা ছিল, কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে তিনি একেবারেই নবীন ছিলেন এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্যে নমুনা সংগ্রহ করতেন।অনবরত সমুদ্রপীড়ায় ভুগলেও তিনি তার অধিকাংশ প্রাণীবিজ্ঞানগত লেখা সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী সংক্রান্ত, যার শুরু হয়েছিল ধীরস্থির প্লাংক্টন সংগ্রহের মাধ্যমে।
সেন্ট জাগোর উপকূলে তাদের প্রথম যাত্রাবিরতিকালে ডারউইন আবিষ্কার করেন আগ্নেয় শিলার উঁচু চূড়ার সাদা একটি অংশে ঝিনুক রয়েছে। ফিটজরয় তাকে চার্লস লায়েলের প্রিন্সিপালস অফ জিওলজির প্রথম খণ্ডটি দিয়েছিলেন যাতে ইউনিফির্মিটারিয়ানিজম প্রক্রিয়ায় বহু বছর ধরে ভূমির ধীরে ধীরে উঁচু হওয়া অথবা নিচু হয়ে হারিয়ে যাবার প্রক্রিয়ার উল্লেখ আছে। ডারউইন লায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিলেন, ভূতত্ত্বের উপর একটি বই লেখার জন্যে চিন্তাভাবনা ও তত্ত্ব তৈরি করতে শুরু করেন। ব্রাজিলে গিয়ে ডারউইন নিরক্ষীয় বনভূমি দেখে মুগ্ধ হন, কিন্তু সেখানকার দাসপ্রথা তাকে ব্যথিত করে।
পাতাগোনিয়ার পুনটা আলটায় পাহাড়চূড়ায় তিনি বিশাল সব বিলুপ্ত স্তন্যপায়ীর ফসিল আবিষ্কার করেন, পাশাপাশি তিনি আধুনিক সামুদ্রিক শামুকেরও দেখা পান, সে থেকে তিনি বুঝতে পারেন এ সব প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে, বহুকাল পূর্বে কোনো মহাপ্লাবন বা অকস্মাৎ বিপর্যয়ের ফলে নয়। তিনি স্বল্প পরিচিত মেগাথেরিয়াম আবিষ্কার করেন, যার গায়ের অস্থিময় বর্ম দেখে তিনি প্রথমটায় স্থানীয় আর্মাডিলোর দানবাকার সংস্করণ ভেবেছিলেন। ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর পর তার এসব আবিষ্কার রীতিমতো হইচই ফেলে দেয়।ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও আরো ফসিলে অনুসন্ধান করতে তিনি স্থানীয় মানুষদের সাথে আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। তিনি লায়েলের দ্বিতীয় ভল্যুমটি পড়েছিলেন এবং তার প্রজাতির সৃষ্টির কেন্দ্র ধারণাটি মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু তার সংগৃহীত নমুনা এবং তাদের ব্যাখ্যা লায়েলের মসৃণ অবিচ্ছিনতা এবং প্রজাতির বিলুপ্তির ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।
প্রথম বিগল অভিযানে ধরে আনা তিনজন ফুয়েগিয়কে এই অভিযানে সঙ্গে নেওয়া হয়। তারা একবছর ইংল্যান্ডে বসবাস করে এবং টিয়ারা ডেল ফুয়েগোতে তাদের মিশনারি হিসেবে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ডারউইন তাদের বেশ মিশুক এবং সভ্য আচরণের অধিকারী মনে করতেন, কিন্তু ফুয়েগোতে তাদের আত্মীয়দের সম্পর্কে তার অভিমত ছিল করুণ, অসভ্য জংলি, গৃহপালিত পশু আর বন্য পশুর মধ্যকার পার্থক্যের মতোই ছিল সভ্য মানুষ ও তাদের ফারাক।ডারউইনের মনে হয় এ পার্থক্যের কারণ সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতা, জাতিগত কোনো সীমাবদ্ধতা নয়। তার বৈজ্ঞানিক সুহৃদদের সাথে তার মতপার্থক্য গড়ে উঠতে শুরু করে, তিনি ভাবেন হয়ত মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে কিছু একটা মিল আছে। এক বছর পর ফুয়েগিয়দের সভ্য করার মিশন পরিত্যাগ করা হয়। জেরেমি বাটন নামধারী ফুয়েগিয়ান স্থানীয়দের মতো জীবনযাপন করতে শুরু করে, সে ওখানেই বিয়ে করে এবং ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার কোনো ইচ্ছা তার মধ্যে দেখা যায় না।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ছবি ও লেখা উইকিপেডিয়া
Copy korlam
উত্তরমুছুনOk. No problem, But give the source link.
মুছুনIt's a very good for human society that's can never forget.
উত্তরমুছুন